২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

আধুনিক বরিশালের রূপকার মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত

আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২০

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত আধুনিক বরিশালের রূপকার ।  তাঁর  পরিচয় এক কথায় বলা মুশকিল । তিনি একাধারে সমাজ সংস্কারক , সাহিত্যিক,  সাংবাদিক,  রাজনীতিবিদ,  শিক্ষানুরাগী ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রদূত ।  বরিশালের নির্মাতা হিসেবে যে  দু’জন ব্যক্তি  স্মরণীয়  ও বরণীয় তাদের একজন শের – ই – বাংলা এ. কে ফজলুল হক  অন্যজন মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত  ।

গৌরনদী উপজেলার ১৮২৬  সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা ব্রজমোহন দত্ত  ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের  মুন্সেফ পদে কর্মরত । তাঁর  ছিলেন বানারীপাড়া উপজেলার  কিশোর গুহ’র (ঠাকুর) কন্যা শ্রীমতি প্রসন্নময়ী ।

তিনি স্বদেশী আন্দোলনের যুগ ভারতীয় উপমহাদেশে অন্যতম নেতা ছিলেন  । রাজ নারায়ন বসু তাঁকে বলেছিলেন , তুমি যদি কাজ করতে চাও তবে বরিশালে থাকিও ।  অশ্বিনী কুমার দত্ত রাজ নারায়ণ বসুর কথা  রেখেছিলেন ।  তিনি ১৮৮৪  সালের ২৭  জুন স্কুল এবং ১৮৮৯ সালে ১৪ জুন বিএম  কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন  । তিনি বিএম স্কুল ও কলেজে  বিনা বেতনে  ১৭ বছর চাকরি করেন  । অধিকন্ত তিনি বিদ্যালয়ের উন্নয়নে 35 হাজার  টাকা দান করেন ।

তিনি ১৮৬৯ সালে ১৪ বছর বয়সে ঢাকা হতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ  করে মাসিক ১০ টাকা বৃত্তি লাভ করেন।  ১৮৭১  সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে  হতে এফ. এ পাশ করেন । ১৮৭২ সালে বিএ পড়ার সময় নলছিটি উপজেলার ন্থুল্লাবাদের কায়স্থ কন্যা ৯ বছর ৪ মাস বয়সী সরলা বালাকে বিয়ে করেন ।

তিনি স্বেচ্ছায় দাম্পত্যজীবন নির্বাসন  দিয়ে ব্রহ্মচারী জীবন বেছে নেন  । তিনি তার স্ত্রীকে বলেছিলেন,  তোমার সাথে আমার মিলন হবে না । আমি কোন সন্তানের জনক হবো না । আমি যদি পিতা হই , তাহলে আমার জীবন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে । বরিশাল এর ছেলেমেয়েরা আমার সন্তান । তাদের মানুষ করা আমার কর্তব্য।  তার স্ত্রী স্বামীর পথ অনুসরণ করেন ।  সংসারের বন্ধন ছিন্ন করে  তিনি বরিশালের জনগণকে  জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আপন করে নিয়েছিলেন । তাইতো তিনি মহাত্মা ।

অশ্বিনীকুমার দত্ত  ১৮৭৬ সালে  কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে বিএ পাস করেন । ১৯৭৮  সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ  এবং ১৮৮০ সালে বি. এ পাস করেন  । ওই বছরই তিনি বরিশাল জজ কোর্টে ওকালতি  শুরু করেন । বরিশালে  তিনি প্রথম এল. এ. এল. এল. বি ।

অল্প সময়ে তিনি একজন খ্যাতনামা আইনজীবী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন ।  তিনি বরিশালের সমাজের নানা কুসংস্কার  ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন  । সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষা বিস্তারের কর্মসূচি তিনি একই সাথে  গ্রহণ করেন   ।

তিনি ছিলেন বরিশালের গৌরব । আধুনিক বরিশালের নির্মাতা । সাধনা, নিষ্ঠা, মানব প্রেম  ও স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি ছিলেন একজন পথপ্রদর্শক । বঙ্গভঙ্গ হতে স্বদেশী ,  স্বদেশী হতে স্বাধীনতার অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে অশ্বিনী কুমার দত্ত বাঙালি জাতির কাছে চিরস্মরণীয় ,  চির পূজনীয়  ।

অশ্বিনী কুমার দত্ত  ছাত্রজীবনে রামতনু লাহিড়ী , রাজনারায়ন বসু, কেশব চন্দ্র, রামকৃষ্ণ পরম হংস ও স্বামী বিবেকানন্দের সংস্পর্শে দীক্ষা লাভ করেন ।  তিনি ব্রাহ্মসমাজ এর সদস্য হন এবং সনাতন সমাজের চাপে পুনরায় সনাতন ধর্মে ফিরে আসেন ।  বরিশালের বাজার রোডের কালী বাড়ির সোনা ঠাকুরকে  তিনি পরম শ্রদ্ধা করতেন  ।

বৃটিশ সরকার  ১৯০৮ সালে  তাকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে  রেঙ্গুনে ও পরে আগ্রায় বন্দি করে রাখে। ১৯১০ সালের ৮  ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি লাভ করেন  । বরিশাল এ ফিরে তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে । তিনি বহুমুত্র ও জটিল পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হন ।

১৯২২ সালে আগস্ট মাসে তিনি চিকিৎসার জন্য কলকাতা গমন করেন । সেখানে তিনি এক বছর তিন মাস ছিলেন । ১৯২৩ সালের ৭ নভেম্বর বুধবার ৩টা ৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাসঐ ত্যাগ করেন।  ঐ দিন রাতেই কালীঘাট  কেওড়াতলায় তার মরদেহ দাহন করা হয়।  সেখানে আজও তার স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network