আপডেট: এপ্রিল ২২, ২০২৪
গলাচিপা, পটুয়াখালী, প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা পরিষদ মাঠে বৈশাখী মেলার নামে চলছে জুয়ার আসর। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে এ জুয়ার আসর বসানো হলেও সবাই রয়েছেন নির্বিকার। জুয়ার আসরের খবরই জানে না উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ১৪ এপ্রিল থেকে গলাচিপা উপজেলা পরিষদ মাঠে বৈশাখী মেলার নামে এ জুয়ার আসর চলছে। জানা গেছে, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলার আয়োজন করে গলাচিপা উপজেলা প্রশাসন। ১৪ এপ্রিল ১ বৈশাখ এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। উপজেলা পরিষদ মাঠে আয়োজিত এ মেলা চলছে এখনো।
সরজমিনে দেখা গেছে, মেলা মাঠের উত্তরপাশে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের স্টল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও দক্ষিণ পাশের অংশ ও পুকুর পাড়জুড়ে ১৫টি জায়গায় বসানো হয়েছে জুয়ার আসর। রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে এ মেলার সব আয়োজন বন্ধ করার কথা থাকলেও শুধু জমজমাট জুয়ার আসর টিকিয়ে রাখতে গভীর রাত পর্যন্ত চলে জুয়ার রমরমা বাণিজ্য। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছে এ জুয়ার আসরে। প্রতিটি জুয়ার বোর্ডে প্রতি রাতে হাজার হাজার টাকার জুয়াখেলা হচ্ছে। স্থানীয় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই প্রতিদিন উপজেলা শহরের ব্যস্ততম এলাকা উপজেলা পরিষদ মাঠে প্রকাশ্যে এ জুয়ার বোর্ড চালানো হচ্ছে। গলাচিপা থানায় তিন লাখ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে রফাদফা করে এ জুয়ার আসর চালাচ্ছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী গ্রুপ। এ টাকা দিতে বিলম্ব হওয়ায় মাঝখানে দুদিন জুয়ার বোর্ড বন্ধ করে রাখা হয় বলেও মেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে যুগান্তরকে জানান। অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ওসি। সবাইকে ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে মেলা ও জুয়ার বোর্ড পরিচালনার জন্য টাকা ওঠানোসহ সবকিছুর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জহিরুন্নবীকে। ১৫টি জায়গায় কাপড় টানিয়ে বসানো হয়েছে এ জুয়ার আসর। আর এসব জুয়ার বোর্ড থেকে নির্দিষ্ট অংকের টাকা তুলছেন মৎস্য কর্মকর্তা নিজেই। ২০ এপ্রিল রাতে প্রকাশ্যে উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় জুয়ার আসর বসানো নিয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে ফোন দিলে তিনি জানান, ‘ওটা জুয়া না, এটাও বৈশাখী মেলার একটা অংশ।’ আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মেলা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আল হেলালকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘কি বলেন আমি এখনই দেখছি, ওসিকে বলছি সব বন্ধ করে দিতে। আর কাকে টাকা দিচ্ছে ভালোভাবে আপনি জানুন তো।’ মৎস্য কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, তারপরও আপনারা (সাংবাদিকরা) বললে বন্ধ করে দেব। একথা বলার পর থেকে তিনি ফোন বন্ধ করে রাখায় তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ পাহারায় গলাচিপায় বৈশাখী মেলার জুয়ার আসর বসানোর ব্যাপারে থানার ওসি মো. ফেরদৌস আলম খান বলেন, ‘আমি বেতন-ভাতা মিলিয়ে অনেক টাকা পাই, আমার জুয়ার টাকা নেওয়ার দরকার নেই।’ তিনি এ প্রতিবেদকের সামনেই কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারকে ফোনে বৈশাখী মেলায় জুয়ার আসর বন্ধ করার নির্দেশনা দিলে মোবাইল ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলতে শোনা যায়, ইউএনও স্যারের অনুমতি নিয়ে এটা (জুয়ার আসর) চালানো হচ্ছে। তারপরও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সামনে বসে জুয়ার আসর বন্ধ করার নির্দেশনা দিলে পরে মাঠজুড়ে জুয়ার আসর চালানো হবে।