আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়ার সঙ্গে যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিনের সখ্য রয়েছে বলে আলোচনা চলছে।
পাপিয়ার নানা কাজে তুহিনের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে এমন অভিযোগও করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চার সহযোগীসহ পাপিয়া আটকের পর একের পর এক বিষ্ময়কর তথ্য আসতে শুরু করে।
প্রকাশ পেতে শুরু করে তার বিলাশবহুল জীবন ও রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে স্যুট ভাড়া অশ্লীল সব কমর্কাণ্ডের ইতিহাস।
এমন পরিস্থিতিতে যে প্রশ্ন ওঠে, পাপিয়ার সব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরকার দলীয় কোনো কোন নেতাকর্মীর পৃষ্ঠপোশকতা রয়েছে?
কাদের আশকারায় এতো দূর এসে পৌঁছেছেন তিনি?
এসব প্রশ্নের মুখেই সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিনের নাম উঠে আসে।
অনেক নেতাকর্মী জানান, তুহিনের সঙ্গে পাপিয়ার ওঠা-বসা ছিল।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এক গণমাধ্যমে তুহিন দাবি করেন, ‘পাপিয়ার সঙ্গে তার সাংগঠনিক সম্পর্কের বাইরে কিছু ছিল না।
রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে পাপিয়ার সঙ্গে আমাকে জড়ানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি মহানগর উত্তরের নেত্রী। রাজনীতির কারণে আমার অনেকের সঙ্গে মিশতে হয়েছে।
আমাদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আছে, সে কারণে দেশের সব জেলার নেত্রীদের সঙ্গেই আমার মিশতে হয়।
এখানে পাপিয়াকে আলাদা করে ভাবার কিছু নেই।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল পাপিয়ার সঙ্গে তার ছবিগুলো প্রসঙ্গে তুহিন বলেন, ‘শুধু আমার সঙ্গে কেন, কার সঙ্গে তার ছবি নাই?
এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে আমাদের পার্টির অনেক নেতার সঙ্গে পাপিয়ার ছবি আছে।’
তুহিন আরো দাবি করেন, ‘পাপিয়াকে নেত্রী আমি বানাইনি। ২০১৪ সালে সে যখন নরসিংদী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হন, তখন আমি তাকে চিনতামও না।
আমার সঙ্গে তার পরিচয় ২০১৭ সালে। তাহলে পাপিয়ার উত্থানে কেমন করে আমার হাত থাকে?’
তিনি যোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগে পাপিয়ার স্থান করে দেয়ার পেছনে আমার কোনোই ভূমিকা ছিল না।
তিনি যখন নেত্রী হন, তখন আমি তাকে চিনতামই না। অর্থাৎ কমিটিতে আসার ব্যপারে আমার কোনো ভূমিকা থাকতে পারে না।
আর জেলা কমিটি গঠনে মহানগরের কোনো হাত থাকে না।’
তবে ২০১৭ সালে পরিচয়ের পর পাপিয়ার সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠার স্বীকার করে তুহিন বলেন, ‘সে সময় আমি এমপি ছিলাম।
দলীয় স্বার্থে তার সঙ্গে আমার দেখা হতো, কথা হতো।
বিশেষকরে তার বাসা আমার বাসা থেকে কাছে, তাই প্রায়ই বাসায় আসত সে।’
তাকে গত এক বছর ধরে পাপিয়া তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে না বলে জানান তুহিন।
এর কারণ হিসেবে তুহিন বলেন, ‘বছর দেড়েক আগে আমার কাছে টাকা ধার চেয়েছিল সে।
আমি দিইনি।
এতে হয়তো অসন্তুষ্ট হয়ে আমার এখানে আসে না।’
তিনি বলেন, ‘এরপর নরসিংদী গিয়ে তাকে ফোন করি, তবু সে দেখা করেনি। আমাকে অনেকটাই এড়িয়ে চলেছে সে।’
পাপিয়া কেন তাকে এড়িয়ে চলেছে প্রশ্নে যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের এই সভাপতি বলেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর কারণেই হয়ত ভয়ে আমার কাছে আর ঘেষতে চায়নি সে।’
প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চার জনকে গ্রেফতার করে র্যাব ১-এর একটি দল।
গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন, পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)।
গ্রেফতারের পর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর দেয়ার তথ্য অনুযায়ী হোটেল ওয়েস্টিনে পাপিয়ার নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট এবং ফার্মগেট এলাকার দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র্যাব।
এসব স্যুট ও ফ্ল্যাট থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি ব্যাংক চেকবই, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করে র্যাব।
র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেছেন, রাজনীতির আড়ালে মাদক ও নারীদের নিয়ে ‘বাণিজ্য’ করতেন পাপিয়া।
রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোয় বিশেষকরে ওয়েস্টিনে মাঝেমধ্যেই ‘ককটেল পার্টি’র আয়োজন করতেন।
এসব পার্টিতে উপস্থিত হতেন সমাজের উচ্চস্তরের লোকজন।
মদের পাশাপাশি পার্টিতে উপস্থিত থাকত উঠতি বয়সী সুন্দরী তরুণীরা।