২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

টেলিটকের ২০০ কোটি টাকা কোথায়!

আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২২

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটকের প্রায় ২০৫ কোটি টাকার হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। এরমধ্যে আছে সংস্থাটির নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকে ১০৫ কোটি টাকার এফডিআর এবং চলতি হিসাবের ১০০ কোটি টাকা। সম্প্রতি সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাবুদ্দিনকে সরকার সরিয়ে দেয়। বিদায়বেলা তিনি উল্লিখিত অর্থের হিসাব দিতে পারেননি। এই প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে প্রায় ৩০৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ আছে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। বিভিন্ন সেবা আর কেনাকাটার বিল পরিশোধ না করায় এভাবে সংস্থাটি দেনায় পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো যুগান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সাহাবুদ্দিন যতক্ষণ পর্যন্ত তদন্তে দোষী সাব্যস্থ না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে কোথাও না কোথাও তো বসাতে হবে। তবে এতটুকু বলতে পারি, এটা তার স্থায়ী জায়গা নয়।

জানা গেছে, টেলিটকের এ সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকটি অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন ও দোষী হিসাবে প্রমাণিত হয়েছেন। এছাড়া বদলির পর দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ব্যাংকে ১০৫ কোটি টাকার এফডিআর আর চলতি হিসাবের ১০০ কোটি টাকার কোনো হিসাব দিতে পারেননি তিনি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই অর্থের ব্যয় কোন খাতে হয়েছে তার জন্য গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। এমন একজন ব্যক্তিকে পুনরায় কেন এমন গুরু দায়িত্বে দেওয়া হলো সেটাও ভাবনার বিষয়।

টেলিটকের দায়দেনা সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে প্রতিষ্ঠানটির দেনা ১০০ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংক ঋণ আছে ১২৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ৮৩ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য টেলিটককে চিঠি দিয়েছে। কয়েকটি স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছেও কয়েকশ কোটি টাকা দেনা রয়েছে টেলিটকের। টাওয়ার কোম্পানি ই-ডটকো, হুয়াওয়ে এবং সামিটও কয়েকশ কোটি টাকা পাবে।

এ বিষয়ে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন বলেন, আমরা টেলিটকের কাছে ৮৩ কোটি টাকা পাব। তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন বলেন, এই ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নেই টেলিটকের। টিকে থাকতে হলে প্রতিষ্ঠানটিকে অন্য কোম্পানির সঙ্গে একীভূত (মার্জার) হতে হবে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সহজে টেলিটকের সিম পাওয়া যায় না। রিচার্জ পয়েন্টও অনেক কম। নেটওয়ার্কের অবস্থাও ভালো নয়। এসব কারণে গ্রাহক টেলিটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

সরকারি মোবাইল কোম্পানি টেলিটকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় সম্পৃক্ততাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে। অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। বিটিআরসির তদন্তে তার বিরুদ্ধে অনিয়মে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। অবৈধ ভিওআইপিতেই বাজিমাত করেছেন সাবেক এই এমডি। তিনি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের লেনদেন করেই আজ শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কেনাকাটা থেকে শুরু করে নিয়োগ, পছন্দের কোম্পানিকে কাজ দেওয়া, পুরোনো পদ্ধতির এসব লুটপাট তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে নির্দিষ্ট কোম্পানির কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি আমদানি কমিশন ও বিটিএস সাইট স্থাপনে শেয়ার সাইট থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ই-ডটকোকে উচ্চমূল্যে একচেটিয়া সাইট প্রদান করেছে। ই-ডটকো টেলিটক থেকে বিল কালেকশনের জন্য কিউবিক গ্লোবাল লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিকে লবিস্ট হিসাবে নিয়োগ করেছে। এই কোম্পানির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে সাহাবুদ্দিন। কাগজে-কলমে কেনা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে নেই; স্ক্র্যাচকার্ড এবং ক্যাশ কার্ডের হিসাবে এমন কোটি কোটি টাকার গরমিলের প্রমাণ মিলেছে। সাহাবউদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। দুদক এসব বিষয়ে তদন্ত করার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে দায়িত্ব দেয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশনায় টেলিটকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করেছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এই তদন্ত প্রতিবেদনও অদ্যাবধি ফাইলবন্দি; এসব অভিযোগের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে তদন্ত হওয়া জরুরি বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং অ্যান্ড ভ্যাস ডিপার্টমেন্ট থেকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিয়োগ পরীক্ষায় সফটওয়্যার সাপোর্টের বিপরীতে ভেন্ডর কোম্পানি সিনটেক্স সিস্টেমের নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৪৫১ টাকার বিল প্রদানের চেষ্টার অভিযোগে টেলিটকের ক্রয় বিভাগের সব কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি করা হয়।

এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর কারণে টেলিটকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাবুদ্দিন ও টেলিটকের অ্যাডমিন বিভাগের ডিজিএম কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তাছাড়া ইতঃপূর্বে বিটিসিএলে ক্রয় বিভাগের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালনের সময় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ওএসডি করা হয়েছিল সাহাবউদ্দিনকে। তার বেশুমার দুর্নীতির কারণে বিটিসিএলের টেলিকমিউনেশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিডি-পি ৫৩) থেকে অর্থ প্রত্যাহার করে নেয় জাপানি দাতা প্রতিষ্ঠান জাইকা।

টেলিটকের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এমডি সাহাবুদ্দিনের দুর্নীতি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় অভিযোগ দিয়েও তেমন কোনো প্রতিকার মেলেনি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু নামমাত্র বদলি করা হয়েছে। এতে করে বেপরোয়া হয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় তিনি দুর্নীতি করতে পারেন এবং ধ্বংস হতে পারে সাবমেরিন কোম্পানি লিমিটেড। ইতঃপূর্বে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিলে তার অনুগত চক্রকে দিয়ে ওইসব আলামত সরিয়ে নেওয়া হয় এবং যারা অভিযোগ করেন তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে টেলিটকের সাবেক এমডি সাহাবুদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলো সবই মিথ্যা। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললাম, আপনারা তদন্ত করে দেখেন। একটি চক্র আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে উঠেপড়ে লেগেছে। দায়িত্বে থাকাকালীন তাদের সুবিধা দেইনি বলে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে চলছে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network